ড্রাইভিং লাইসেন্স কি?
ড্রাইভিং লাইসেন্স হল বাংলাদেশ সরকারের স্বৃকীত একটি বৈধ পরিচয় পত্র, যা একজন ব্যাক্তি গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বৈধতা প্রমাণ করে। সাধারণত, একজন ব্যক্তির গাড়ি চালানো দক্ষতা পরীক্ষ করে, এই রকম পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়ে থাকে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স কত প্রকার?
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরণের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। তা হলো...
(১) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং
(২) অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া
সাধারণত বাংলাদেশে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে যে কাজ বা ধাপগুলো অতিক্রম করতে হয়, সেগুলোকে আপনাদের বুঝার সুবিধাতে আমরা ৭টি ধাপে বিভিক্তি করে নিচে আলোচনা করা হল…
০১. ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফি জমা দেওয়া
একটি নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে, প্রথমে আপনাকে শিক্ষানবিশ বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স জন্য নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিতে হবে। সাধারণত, হালকা মানের মোটরযান (মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার) ইত্যাদির যেকোন একটি গাড়ি চালানোর জন্য লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাবদ ভ্যাটসহ সর্বমোট ৩৪৫/- (তিনশত পঁয়তাল্লিশ) টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। তবে কেউ যদি দুই ধরনের গাড়ি চালাতে চাই, তাকে ৫১৮/- (পাঁচশত আঠার) টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশে বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকগুলোর যেকোন শাখায় এই টাকা জমা দেওয়া যাবে। ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া পর, ব্যাংক থেকে ২টি জমা রশিদ (গ্রাহক ও বিআরটিএ কপি) সংগ্রহ করতে হবে। আপনি চাইলে ব্যাংকে না গিয়ে এই লিংকের https://brta.cnsbd.com/ মাধ্যমে ঘরে বসে টাকা জমা দিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে পেমেন্ট কনফার্মেশন ম্যাসেজটি প্রিন্ট করে নিতে হবে।
২. শিক্ষানবিশ বা লার্নার ফরম পূরণ ও জমা করা
দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে শিক্ষানবিশ বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স জন্য একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করে, তা যথাযথ তথ্য পূরণ করে বিআরটিএ অফিসে জমা দিতে হবে। শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরমটি আপনি যেকোন বিআরটিএ অফিসে পেয়ে যাবেন বা এই লিংক (ফরম) থেকে ডাউনলোড করে বাসা থেকে পূরণ করে নিয়ে যেতে পারবেন। আপনি যে এলাকায় থাকেন বা যেখান থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে চান। সে এলাকায় বিআরটিএ যে জোন অফিস আছে সেখানে গিয়ে ফরম জমা দেওয়াটা আপনার জন্য উত্তম হবে। যেদিন আপনি আবেদন জমা দিবেন সেদিনেই আপনাকে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে দিবে। লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এ পরিক্ষার তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখ থাকবে।
০৩. শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স’র জন্য কি কি কাগজাদি জমা দিতে হয়
শিক্ষানবিশ বা লার্নার আবেদন ফরম জমা দেওয়া সাথে আপনাকে নিচের কাগজপত্রও জমা দিতে হবে..
ক) ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ (বিআরটিএ কপি)
খ) এক কপি জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধনের সত্যায়িত ফটোকপি
গ) আবেদনপত্রে দেওয়া ঠিকানা আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধন’র ঠিকানা এক না হলে, ফরমে লিখিত ঠিকানার একটি বিলের (বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি/টেলিফোন) ফটোকপি দিতে হবে।
ঘ) ৩ কপি স্ট্যাম্প ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
০৪. ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা ধরণ
ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় ৩ টি ধাপ থাকে । তা হল…(১) লিখিত (২) মৌখিক ও (৩) প্যাকটিক্যাল
লিখিত পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষা সাধারণত ২০ নম্বরের হয়ে থাকে। যেখানে ৮-১০ নম্বারে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর এবং বাকিগুলো MCQ থাকে। পরীক্ষার সময় ১৫-২০ মিনিট। সাধারণত, নিচের লিংকের প্রশ্নগুলো অনুসরণ করলে আপনি শতভাগ পাস করবেন। (প্রশ্ন উত্তর)
মৌখিক পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষার পরপরই বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আপনার মৌখিক টেস্ট নিবে। সাধারণত এই টেস্টে রোড়ে সাইন বা রোড মার্কিং ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
প্যাকটিক্যাল পরীক্ষা: মৌখিক পরীক্ষা পর আপনাকে প্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে হবে। এই সময় আপনাকে মোটর সাইকেল বা প্রাভেট কার নিয়ে যেতে হবে। গাড়ি না নিয়ে গেলেও সমস্যা নেই, ঐখানে ২০০/৫০০ টাকার বিনিময়ে গাড়ি পেয়ে যাবেন। কয়েক মিনিট গাড়ি চালিয়ে, উনাদের দেখানোর পর আপনার পরীক্ষা সমাপ্তি হবে। এরপর আপনি চলে আসতে পারবেন।
৫. মূল বা স্মার্ট কার্ডরে জন্য আবেদন
পরীক্ষা ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় উর্ত্তীণদের তালিকায় আপনার নাম থাকলে, আপনাকে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য ১৬৮০/- (০৫ বছর মেয়াদে) এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য ২৫৪২/- (১০ বছর মেয়াদে) ব্যাংকে জমা দিতে হবে। আপনি চাইলে উপরে দেওয়া লিংক থেকেও ঘরে বসে এই টাকা জমা দিতে পারবেন। তবে আপনাকে ব্যাংক জমা রশিদ বা পেমেন্ট কনফার্মমেশন রাখতে হবে। টাকা জমা দেওয়ার পর আপনাকে আবার মূল বা স্মার্ট কার্ডে জন্য আবেদন ফরম পূরন করে নিচের কাগজদিসহ বিআরটিএ অফিসে জমা দিতে হবে।
ক) টাকা জমা দেওয়ার রশিদ (বিআরটিএ কপি)
খ) এক কপি জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধনের সত্যায়িত ফটোকপি
গ) অপেশাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন।
ঘ) সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৬. আঙ্গুলের ছাপ প্রদান
মূল বা ম্মার্ট কার্ডর আবেদনের পর আপনাকে বিআরটিএ থেকে একটি তারিখ ও স্থান লিখে দিবে। উক্ত তারিখে আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে আপনার আঙ্গুলের ছাপ, স্বাক্ষর ও ছবি প্রদান করতে হবে। আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার পর বিআরটিএ অফিস থেকে আপনাকে একটি একনলেজমেন্ট বা অস্থায়ী স্লিপ দিবে। আপনি এটি দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন।
৭. ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ
একনলেজমেন্ট বা অস্থায়ী স্লিপ পাওয়ার পর থেকে, সাধারণত ৩০/৬০/৯০ দিন সময় লাগে স্মার্ট কার্ড আসতে। আপনি একনলেজমেন্ট বা অস্থায়ী স্লিপ দেখিয়ে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে ৯০ দিনের বেশি সময় লাগলে, আপনার একনলেজমেন্ট বা অস্থায়ী স্লিপ এর মেয়াদ বাড়িয়ে দিবে।
বি.দ্র. বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ চাইলে ফি পরিবর্তন করতে পারে।
আপনার প্রতিদিনের কাজের সহযোগি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন…